স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস – ইতিহাস, তারিখ, শুভেচ্ছা বার্তা, ছবি
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তখন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার দিনে বাংলাদেশের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা হয় ।এই নিবন্ধে আমরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ইতিহাস সহ বিস্তারিত আলোচনা করব।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ইতিহাস
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আলোচনা শুরুতে যেটা বলতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবদানের কথা । তিনি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের দোসরদের সহযোগিতায় নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এবং ওই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যাহতির পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাসের যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মধ্যদিয়ে জাতীয় বিজয়ের লাভ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে। এদিকে বঙ্গবন্ধু ও ডঃ কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে আটটায় তারা লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে যান । বেলা দশটার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমেদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহ অনেকের সঙ্গে। পরে বৃটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে পরদিন ৯ জানুয়ারি দেশে পথে যাত্রা করেন। ১০ তারিখ সকালে তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গীরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা প্রধান, নেতৃবৃন্দ । প্রধানমন্ত্রী সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করে । সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের কাছে তাদের পণ্য সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছেন অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস কবে পালিত
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে বন্দিহয়ে বঙ্গবন্ধু চলে যান লন্ডনে, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ তারিখ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রথম পা রাখেন। যেহেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ তারিখে বাংলাদেশে আসেন তাই ১০ ই জানুয়ারি বাংলাদেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা হয়।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস শুভেচ্ছা বার্তা
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জোট বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানের কর্মসূচী হাতে নেয়। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের দৈনিক কর্মসূচি পরিবর্তন আনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে কেন্দ্র করে তারা নানারকম তথ্যমূলক অনুষ্ঠান ও কলাম প্রকাশ করে। এদিন বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কর্মসূচী পালন করেন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ছবি
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের মানুষ একজন আরেকজনকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের শুভেচ্ছা জানায়। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগের শুভেচ্ছা জানানোর অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো। তাই অনেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ছবি ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে থাকেন। নিচে কিছু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ছবি সংযুক্ত করা হলো।
বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে আমার সেলের পাশে, আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।”