বিশ্ব পর্যটন দিবস: তারিখ, প্রতিপাদ্য বিষয়, ইতিহাস, শুভেচ্ছা বার্তা, উক্তি, স্ট্যাটাস, ছবি
ইংরেজিতে বলা হয় “ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম” অর্থাৎ বিশ্ব পর্যটন দিবস। সারা বিশ্বব্যাপী এই দিনটি অনেক গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। পর্যটন দিবস পালনের জন্য অনেক ইতিহাস আছে।
পর্যটন দিবস কবে ?
বিশ্ব পর্যটন দিবস ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে।
পর্যটন দিবসের ইতিহাস
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বব্যাপী আর্থিক ও যোগাযোগের ঘটলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাঘাত ঘটে তা ছিল ধারণা একেবারেই বাইরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের আর্থিক সংকট মোকাবেলার করার জন্য এক দেশের মানুষ অন্য দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পর্যটন শুরু করেন। এ পর্যটনের মাধ্যমিক এক দেশের সাথে অন্য দেশের যেমন বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় তেমনি দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক উন্নয়ন ও প্রসার বিস্তার লাভ করে। পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠান ও দেশের বন্ধুত্ব দেখে সকলকে নিয়ে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সংস্থা। বিষয়টির ফলশ্রুতি দেখে জাতিসংঘ পর্যটনের উপর বিশেষ একটি নজর দেয়। জাতিসংঘ লক্ষ করেন যে পর্যটনের অন্তর্ভুক্ত দেশ গুলো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন যা যেকোন দেশের উন্নতি ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে সহায়তা করেন। ঠিক তখন থেকেই বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের একটি উদ্যোগ নেন জাতিসংঘ।
পর্যটন দিবস এর নামকরণ
ইতিহাস সূত্রে জানা যায় ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে “বিশ্ব পর্যটন দিবস” নামকরণ করা হয় এবং প্রতি বছরে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশ্ব পর্যটন দিবস কে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখ বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করেন । পরবর্তী সময়ে তুরস্কে ১৯৯৭ সালে দিবসটি নিয়ে একটি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দিবসটি পালনের গতি অব্যাহত রাখার জন্য ও উন্নয়নের পক্ষে সকল দেশ ঐক্যমত পোষণ করেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবসের শুভেচ্ছা ও বার্তা
1. শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করবেন না বরং যাত্রা উপভোগ করুন….. রাস্তায় গর্ত নিয়ে চিন্তা করবেন না তবে ভ্রমণের সময় আপনি যা দেখেন তা উপভোগ করুন…. বিশ্ব পর্যটন দিবসের শুভেচ্ছা!!
2. পর্যটকদের একটি চেকলিস্ট রয়েছে তারা কোথায় গেছে এবং কোথায় যায়নি কিন্তু ভ্রমণকারীরা জানেন না তারা কোথায় যাচ্ছেন….. আপনাকে বিশ্ব পর্যটন দিবসের শুভেচ্ছা।
3. বিশ্ব একটি বই ছাড়া আর কিছুই নয় এবং ভ্রমণ সেই বইটি পড়ার সেরা উপায়…। যারা ভ্রমণ করেন না তারা এই সুন্দর বইটি পড়ার মজাটি মিস করবেন। আপনাকে বিশ্ব পর্যটন দিবসের শুভেচ্ছা।
4. বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে, আমি কামনা করি যে আপনি আরও অনেক নতুন জায়গা দেখতে এবং অন্যদের অনুসরণ করার জন্য লালন এবং পায়ের ছাপ রেখে যাওয়ার জন্য সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে আরও বেশি বেশি ছুটির দিন দিন।
বিশ্ব পর্যটন দিবসের উক্তি
5. বিশ্ব দেখুন। এটি কারখানায় তৈরি বা অর্থপ্রদানের যে কোনও স্বপ্নের চেয়ে আরও চমত্কার। কোন গ্যারান্টি চাইবেন না, নিরাপত্তা চাইবেন না।” -রে ব্র্যাডবেরি
6. “যাত্রাই গন্তব্য।” -ড্যান এলডন
7. “ভ্রমণ করা মানে আবিষ্কার করা যে সবাই অন্য দেশ সম্পর্কে ভুল।” ” Aldous Huxley
8. “ভ্রমণের ব্যবহার হল কল্পনাকে বাস্তবের সাথে নিয়ন্ত্রণ করা, এবং জিনিসগুলি কেমন হতে পারে তা চিন্তা করার পরিবর্তে, সেগুলিকে যেমন আছে তেমনই দেখুন।” – স্যামুয়েল জনসন
অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান: প্রতিটি দেশের অর্থনীতির দিকে নজর দিলে দেখা যায় পর্যটন শিল্পের অবদান অন্যতম । ২০১৭ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের অবদান ছিল প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন টাকা।
পর্যটনের স্থান : থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিশ্বের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে দর্শন করতে আসেন।
বিশ্ব পর্যটন স্থান: পর্যটন প্রবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে চলছে। বিশ্বের যে সকল স্থান মানুষ বেশি পর্যটন করে থাকেন তাহলে ব্যাংকক, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্সিটি , চালস্টোন, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, বাংলাদেশের কক্সবাজার ইত্যাদি
পর্যটক এর প্রকারভেদ: পর্যটক অনেক প্রকার হয়ে থাকে যেমন শিক্ষামূলক পর্যটক,ব্যবসায়ী পর্যটক, রাজনৈতিক পর্যটক ইত্যাদি।
শিক্ষামূলক পর্যটন: কোন প্রতিষ্ঠান থেকে যখন কোনো দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা হয় তখন তাকে শিক্ষামূলক পর্যটন বলা হয়।শিক্ষামূলক পর্যটন প্রতিষ্ঠান, পরিবার বা ব্যক্তিগতও হতে পারে।
ব্যাবসায়িক পর্যটন: ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে পর্যন করা হয় তাকে ব্যবসায়ী পর্যটন বলা হয়।
রাজনৈতিক পর্যটন: রাজনৈতিক কারণে যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ বা সফর করা হয় তখন তাকে রাজনৈতিক পর্যটন বলা হয়।
বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রের কথা বললেই চোখের সামনে ভেসে আসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ভ্রমনে দেশ ও বিশ্বের নানা পর্যটকরা চলে আসেন। কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য সারাবিশ্বের পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছেন। তাই প্রতিবছর এই সারাবিশ্বে হতে পর্যটকরা ছুটে আসেন। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন যেমন সুন্দরবন, তাজহাট জমিদারবাড়ি, বান্দরবান, লালবাগ কেল্লা, সিলেটের জাফলং,আহসান মঞ্জিল ইত্যাদি।
সেন্ট মার্টিন: স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিন নারিকেল জিঞ্জিরা বলা হয়। বাংলাদেশের পুরো দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে এই দ্বীপটি বিস্তার লাভ করেন। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি ক্ষুদ্র দর্শনীয় স্থান সেন্ট মার্টিন।
কক্সবাজার: ছুটির দিনের ভ্রমণ স্থান হিসেবে কক্সবাজারে তুলনা অপরিসীম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিশাল জলরাশি সকলের মনকে আকর্ষণ করে। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ ও দেশের বাইরের অনেক পর্যটক ভ্রমণ করার জন্য ছুটে আসেন।
সাজেক: সাজিব বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। হাজার ১৮৮৫ সালে ১৭২০ফুট উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হয় রুইলুই পাড়া। এই উচ্চতা থেকে পার্শ্ববর্তী সীমান্ত স্পষ্ট দেখা যায়।
সুন্দরবন: সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনভাবেই বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। এত অপরূপ রূপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন অন্য কোন দেশে খুঁজে পাওয়া ভার। খুলনা জেলার হোটেলে অবস্থান নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে হয়। সেখানকার স্থানীয় লোকদের সহায়তা নিয়ে সুন্দরবন ঘুরে দেখানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গাগুলোতেও ভ্রমণের জন্য অনেক লোক আসেনি।
প্রতিপাদ্য বিষয়: পর্যটন দিবসে ২০২০ সালে পুনরায় প্রতিবাদ করে “ট্যুরিজম ফর অল” অর্থাৎ সকলের জন্য ভ্রমণ। বিশ্ব সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলায় বিশ্ব পর্যটন দিবস এর মূল উদ্দেশ্য বলা যায়।