নামাজ

লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

লাইলাতুল কদরের রাত একটি মহিমান্বিত রাত। এ রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ক্ষমার দরজা খুলে দেন এবং রহমতের দরজাও খুলে দেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা প্রয়োজন।লাইলাতুল কদরের নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের মুসলিম লাইলাতুল কদরে সারা রাত্রি ইবাদত করে থাকেন। অনেকে তাই জানতে চান লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পর্কে জানতে এসেছেন। আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন এই ব্লগ পোস্টে আমরা লাইলাতুল কদরের অর্থাৎ শবে কদরের নামাজের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিব ইনশাল্লাহ।
লাইলাতুল কদরের নামাজ মূলত দুই রাকাত করে পড়ে সালাম ফেরাতে হয় যেহেতু এ রাতে ইবাদতের রাত তাই আপনি যত খুশি তত রাকাত সালাত আদায় করতে পারবেন তবে দুই রাকাত করে পড়ে সালাম ফেরাতে হবে। লাইলাতুল কদরের সালাতের নিয়ম লাইলাতুল কদরের সালাতের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে তবে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি আমরা বর্ণনা করবো ইনশাল্লাহ। শবে কদরের সালাতের প্রথম ধাপ হচ্ছে নিয়ত করা।

কদরের নামাজের নিয়ত কি

নিয়ত একটি আরবি শব্দ নিয়ত শব্দের অর্থ সংকল্প করা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়া। তাই শবে কদরের দুই রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বে মনে মনে এই সালাতের পবিত্র ইচ্ছা পোষণ করাকেই নিয়ত বলে অবহিত করা যায়। তবে বিভিন্ন আলেমের দিন আরবিতে উচ্চারণ করে নিয়ত করার প্রতি উৎসাহিত করে থাকেন তবে হাদিসে এর কোন ভিত্তি নেই। হাদিসে রয়েছে ইন্নাল আমালু বিন নিয়ত অর্থাৎ নিয়ত করা মানেই কাজের অর্ধাংশ করে ফেলা এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি নিয়তটা আসলে মনের ব্যাপার তাই শবে কদরের সালাত আদায়ের পূর্বে নামাজের দাঁড়িয়ে মনে মনে সংকল্প করা যে আজকের এই পবিত্র রাতে আমি সারারাত সালাত আদায় করব দুই রাকাত করে এভাবে মনে মনে চিন্তা করলেই আপনার নিয়ত পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে।

কদরের নামাজ শুরু করা

কদরের সালাত শুরুর পূর্বে নিয়ত করতে হবে এবং নামাজের অগ্রিম প্রস্তুতি যে সমস্ত কাজ রয়েছে যেমন অজু গোসল ইত্যাদি করে নিতে হবে এবং নামাজে নিয়ত করে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠিয়ে হাত বাঁধতে হবে। সচরাচর আমরা ফরজ সালাত যেভাবে আদায় করি সেই ভঙ্গিতেই সালাত আদায় করলেই সালাত হয়ে যাবে তবে শর্ত হচ্ছে দু’রাকাত করে নামাজ আদায় করতে হবে। বাধার পরে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়তে হবে। তারপরে সানা পড়তে হবে এবং নামাজের শুরুতে যে সমস্ত দোয়া গুলি রয়েছে সেগুলো পড়তে হবে যেমন সানা সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাক কা স্মোকা ওয়া তা আলাজাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গইরুক।
সানা পড়ার পরে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে আরো কিছু আনের সঙ্গে দোয়া রয়েছে নামাজের পূর্বে সেগুলিও পড়তে পারেন যেহেতু শবে কদরের নামাজের উদ্দেশ্যই হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ মহান রব্বুল আলামীনের সাথে সাক্ষাৎ করা কিংবা তার সামনে নতজানু হয়ে থাকা তাই কদরের সালাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুরা কেরাত দীর্ঘ করা কিংবা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাই আরও যে সমস্ত দোয়া রয়েছে আল্লাহর কাছে নিজেকে নিবদ্ধ করার জন্য সেগুলো পড়বেন যেমন ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজেহিয়া লিল্লাজি ফাতারস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ হানিফাউ ওমা আনা মিনাল মুশরিকিন। এছাড়াও আল্লাহর সামনে স্ট্রংলি মাথানত করে দাঁড়িয়ে পড়বেন ইন্নাস সালাতি ওয়ানসুকি ও মাহইয়া মামা তিল্লিল্লাহি রব্বিল আলামিন।
এরপরে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বেন। সূরা ফাতিহার শেষ হলে সূরা কদর একবার পড়বে। রুকু সিজদা শেষ করে প্রথম রাকাত পূর্ণ করবে এবং দ্বিতীয় রাকাতও একইভাবে আদায় করবে। তবে দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করবে। অতঃপর রুকু সেজদা করে তাশাহুদ দরুদে ইব্রাহিম এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবে। তবে যেহেতু এটি নফল সালাত তাই আপনি যদি হাদিস সম্মত অসংখ্য দোয়া জেনে থাকেন তাহলে সালাম ফিরানোর পূর্বে দোয়া মাসুরার পরে পড়তে পারবেন। এবং যারা সূরা কদর মুখস্থ করতে পারেননি তারা যেহেতু এটি নফল সালাত সেহেতু অন্যান্য সালাতের মতো যে সমস্ত সূরা আপনার মুখস্ত রয়েছে সেভাবে দুই রাকাত করে নামাজ পড়লেও আদায় হয়ে যাবে কোন সমস্যা নেই যারা এ ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে বিষয়টি ক্লিয়ার করলাম।
পরিশেষে, মহান রব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বান্দার অন্তর দেখেন অর্থাৎ তাকওয়া দেখেন। তাই আপনি যতটুকু এলেম অর্জন করেছেন ততটুকু এলেম দিয়ে আমল করলেই মহান রব্বুল আলামীন খুশি হবেন। কবে সেটি করতে হবে একাগ্র চিত্তে অর্থাৎ নির্ভেজাল এবং ভয় অন্তরে পোষণ করে। শবে কদরের রাত একটি মহিমান্বিত রাত তাই সালাত আদায়ের পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত জিকির আজগার সহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করে রাত্রি যাপন করতে পারেন। শবে কদরের সালাত আসলে কঠিন কোন সলাত নয় অনেকেই শবে কদরের সালাতকে কঠিনভাবে উপস্থাপন করে কিংবা কঠিনভাবে বুঝে থাকেন তাই অনেকে এই নামাজটি আদায় করেন না মধ্য কথা হচ্ছে শবে কদরের রাত্রি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত রাত এ রাতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ক্ষমার ভান্ডার খোলা থাকে রহমতের দুয়ার খোলা থাকে।
তাই আপনি যদি সূরা কদর মুখস্ত না থাকে কিংবা বুজুর্গানে দ্বীনদের মতে যে নিয়মটি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে সালাত আদায় করতে ব্যর্থ হন তবে অন্যান্য দিনের মতো যেভাবে সালাত আদায় করেন সেইভাবে নফল নিয়ত করে সালাত আদায় করলেও আপনার নামাজ হয়ে যাবে কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। আশা করি শবে কদর তথা লাইলাতুল কদরের নামাজের ব্যাপারে আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।

Ratul

আমি রাতুল, এটা আমার ডাক নাম। এই নামে আমার এলাকার সবাই আমাকে চিনবে তবে বাইরের কেউ হয়তো চিনবে না। আমি বিশ্বাস করি সফলতা ভাগ্য এবং পরিশ্রমের দ্বারা নির্ধারিত। এই ব্লগটি আমি সখ করে তৈরি করেছি, এবং এটিই আমার ১ম ব্লগ। আশা করি আপনাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে উপকৃত করতে পারবো। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *