একাউন্ট

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনি প্রাপ্তবয়স্ক অথচ এখন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই? ব্যাংক একাউন্ট খোলার ইচ্ছা ও প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম না জানা থাকায় আপনি দ্বিধাবোধ করছেন আপনার জন্যই আজকের এই ব্লগ! বর্তমান যুগে ব্যাংক একাউন্ট থাকাটা খুবই জরুরী কেননা প্রত্যেকটি কাজেই ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে নিত্যদিনের অজস্র প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হয়। বর্তমানে আপনার টাকার নিরাপদ আবাসস্থল হল ব্যাংক এছাড়া বিভিন্ন রকম টাকা পয়সার লেনদেন করতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে তাই ব্যাংক একাউন্ট না থাকার মানে হচ্ছে আপনি অন্য দেশের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছেন। অতএব আজকের এই ব্লগ পোস্টে ব্যাংক একাউন্টের বিস্তারিত নিয়ম দিয়ে দিব আপনি এটা দেখে অনায়াসেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

প্রথমে আপনার ঠিক করার দরকার কোন ব্যাংকে আপনি একাউন্ট খুলবেন সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো ব্যাংকে আপনি সহজে একাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন যদি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম গুলো সঠিকভাবে জানা থাকে। আপনি কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখা থেকে আপনার বাসা কিংবা কর্মস্থলের দূরত্ব অনলাইন সুবিধার কার্ড সুবিধার দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখার বিস্তৃতি সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ইত্যাদি বিবেচনা রাখা দরকার তাছাড়া ব্যাংক চার্জ ইন্টারেস্ট সার্ভিস কোয়ালিটির খেয়াল রাখতে হবে আবার আপনি যদি ইসলামিক ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারে ন। এক্ষেত্রে তাদের নিয়ম নীতিগুলো ভালোভাবে পড়ে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিবেন ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও ক্ষেত্র বিশেষে সুদ সংশ্লিষ্ট রয়েছে এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার পূর্বে আপনাকে প্রথমে ব্যাংকের ফরম সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণত দু’রকমের ব্যাংকিং ফরম পাওয়া যায়।
প্রথমত ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম
দ্বিতীয়ত প্রাতিষ্ঠানিক বা অব্য ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম।
১)নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি মূলত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হবে এমন অ্যাকাউন্ট যে অ্যাকাউন্টের শিরোনাম অর্থাৎ টাইটেল হবে একাউন্ট কোন ব্যক্তির নামে হয় সেগুলো ব্যক্তিগত একাউন্ট হিসেবে এই ধরনের ফরমের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির নামে একাউন্ট খোলা যাবে
২) প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম: এই ধরনের ফর্মে ব্যাংক একাউন্টের শিরোনাম বা টাইটেল অথবা একাউন্টটি কোন প্রতিষ্ঠানের নামে হয়ে থাকে এ একাউন্টগুলো অব ব্যক্তিগত একাউন্ট হিসেবে গণ্য হবে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম: যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন

বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হয় কিন্তু সাধারণত প্রায় সব ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কিছু কাগজপত্রের অবশ্যই দরকার পড়ে চলুন জেনে নেই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে কি কি লাগে!

১) পূরণ কৃত ফর্ম

আপনার পছন্দের শাখা থেকে অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম সংগ্রহ করুন যদি একাধিক ব্যক্তির নামে যৌথ হিসাব হয় তবে ফর্মের ব্যক্তিগত সংক্রান্ত তথ্যাবলী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফটোকপি করে নিন।

২) স্পেসিমেন্ট সিগনেচার কার্ড

অনেক ব্যাংক একটি একাউন্ট খোলার ফর্ম এর সাথে দিয়ে দেয় এতে ব্যাংক অফিসারের সামনে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার স্বাক্ষর করেন।

৩) পরিচয়দানকারী

সাধারণত ওই ব্যাংকের কোন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন কারেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে কেবল অন্য কোন কারেন্ট একাউন্ট খোল্ডার গ্রাহক পরিচয় দানকারী হবেন পরিচয়দানকারী এখন ফর্মের নির্ধারিত স্থানের নমুনা স্বাক্ষর নাম ঠিকানা একাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখবেন তিনি একাউন্ট খোলার দিন উপস্থিত না হলেও চলবে। বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন আর একাউন্ট খুলতে পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হয় না।

৪) ছবি

একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির দুই থেকে তিন কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে ফটোগুলো সত্যায়িত হতে হবে নমিনির এক কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।

৫) নমিনী

ব্যক্তিগত একাউন্টে সর্বনিম্ন একজন নমিনির পরিচয় প্রদান করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্টে নমিনি দেখা যায় না নমিনের স্বাক্ষর প্রয়োজন নেই তবে নাম ঠিকানা ও ছবি দিতে হবে নোমিন এর যে কোন একটি পরিচয় পত্র দিলে আরো ভালো হয়।

৬) টাকা

নীল খেতে জমা স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাগবে ডিপিএস এর জন্য কিস্তি ও সমপরিমাণ ও এফডিআর এর জন্য এফডিআর সমপরিমাণ টাকা লাগবে।

৭) অন্যান্য কাগজপত্র

অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র ও কমিশনার মেয়র চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য উক্ত পরিচয় পত্রের অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স জন্ম সনদ চাকরির পরিচয় পত্র স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ইত্যাদি থেকে যেকোনো দুটি উপস্থাপন করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা যা লাগবে
১) প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারের নাম ও পদবী সহ সিল
২) ট্রেড লাইসেন্স
৩) প্রতিষ্ঠানটি একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না হলে রেজুলেশন লাগবে যাতে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও একাউন্টটি কে পরিচালনা করবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত রেজুলেশনে পর্ষদ ভোট গভর্নিং বডির সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন।
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও মাঝেমাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাগজপত্র তথ্যাবলীর প্রয়োজন পড়ে যেমন পার্টনারশিপ ফরম সমিতির গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পত্র এনজিও বুড়ো হতে লাইসেন্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অফ ইন কর্পোরেশন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অফ ইনকম্পরেশন মেমোরেন্ডাম অফ এসোসিয়েশন আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন সার্টিফিকেট অফ কমেন্ট অফ বিজনেস ইত্যাদি।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মের মধ্যে কিছু বিষয় আপনাকে গুরুত্বের সাথে মাথায় রাখতে হবে । যা ভুলে গেলে চলবেই না
১) সংযুক্ত সকল কাগজের মূল কপি সাথে রাখবেন
২) জমা স্লিপ ও হিসেব নাম্বার সংরক্ষণ করবেন।
৩ চেক বই তোলার জন্য ওই দিন ওই নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
৪) আপনার বর্তমান ঠিকানায় ব্যাংক থেকে চিঠি আসতে পারে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন.
৫) অ্যাকাউন্ট খোলার দিন ও প্রথমবার চেক বই উঠানোর দিন আপনাকে অবশ্যই নিজে যেতে হবে।
৬)ব্যাংকের ডাটা বেজে আপনার নামের বানান সঠিকভাবে তোলা হয়েছে কিনা চেক করে নিন।
৭) ডেবিট কার্ড নেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে করে নিন।
পরিশেষে, অনেকেরই ধারণা থাকে যে ব্যাংক একাউন্ট খোলার মত ঝামেলার কাজ মনে হয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই এই ঝামেলা এড়ানোর জন্যও অনেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী হয় না সত্যি বলতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা মোটেও তেমন একটা ঝামেলার কাজ না বিষয়টি সম্পর্কে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা সুস্পষ্ট ধারণা পেলেন এই পরিকল্পনা মাফিক সহজেই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংক একাউন্টের দরকার হয় সে ক্ষেত্রে আমরা আত্মীয়-স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন করে থাকি আমরা আসলে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতাম না বলেই এরকমটা করতাম তার চেয়ে নিজেই খুলে ফেলুন আপনার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট একটু আধটু ঝামেলা আর অল্প একটু সময় হয়তো লাগবে তবে যে সুবিধা পাবেন। তা কিন্তু মোটেও অল্প কিছু নয়। তাই উপরের ব্লগ পোস্টটি মনোযোগের সাথে কয়েকবার পড়ুন এবং নিকটস্থ ব্যাংকের যোগাযোগ করে সেই নিয়ম মাফিক আপনার ব্যাংক একাউন্টটি তৈরি করে ফেলুন।

Ratul

আমি রাতুল, এটা আমার ডাক নাম। এই নামে আমার এলাকার সবাই আমাকে চিনবে তবে বাইরের কেউ হয়তো চিনবে না। আমি বিশ্বাস করি সফলতা ভাগ্য এবং পরিশ্রমের দ্বারা নির্ধারিত। এই ব্লগটি আমি সখ করে তৈরি করেছি, এবং এটিই আমার ১ম ব্লগ। আশা করি আপনাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে উপকৃত করতে পারবো। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *